চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৫ কোটি ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১২ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষের। সারা বিশ্ববাসী এখন শুধু ভাইরাসটির একটি কার্যকর ভ্যাকসিনের আশায় দিন গুনছে। ফাইজার ও বায়োএনটেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে টিকা তৈরির চেষ্টা করে আসছিল। এবার প্রতিষ্ঠান দুটি দাবি করেছে, তাদের তৈরি টিকা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। তারা বলছে, এটি বিজ্ঞান ও মানবতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
বৃটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ছয়টি দেশের প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষের ওপর নতুন তৈরি এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল। টিকা নেয়ার পর কারও দেহেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিকার দুটি ডোজ রয়েছে। প্রথম ডোজ দেয়ার ২৮ দিন পর এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সাত দিন পর রোগীরা করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হচ্ছেন।
যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বোর্লা জানিয়েছেন, টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে। যাদের আগে কখনো করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো এ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷
জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এই ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ আগামী সপ্তাহেই মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি৷
ফাইজার ও বায়োএনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ সময় বাঁচাতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে উৎপাদনও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দুটি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে চায়৷ এর ফলে অন্তত আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে৷ ২০২১ সালে আরও ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফাইজার৷
করোনা থেকে সুরক্ষায় বিশ্বজুড়ে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান টিকা নিয়ে কাজ শুরু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের এখন ১৫০টির বেশি টিকা উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৪টি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ১১টি টিকা পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলমান থাকা এসব টিকার মধ্যে ফাইজার ও বায়োএনটেকের ক্ষেত্রেই প্রথম কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল।
এদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩০ জনে। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৯ হাজার ১২০ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ কোটি ৬০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ জন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৮ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছেন। বিশ্বে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যাও এই দেশটিতে। এই পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৫৬ জন এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃত্যু বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকলেও মৃত্যু বিবেচনায় দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৩৮ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ভারত মৃত্যু বিবেচনায় আছে তৃতীয় স্থানে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ৭৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১০৪ জনের।
দেশে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ হাজার ৯২ জনে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৪ লাখ ২১ হাজার ৯২১ জন।
মানবকণ্ঠ/এসকে