করোনা পরিস্থিতিতে রোববার থেকে শুরু হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেষ্ট পরীক্ষায় কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু কবে, কিভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে, এ নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বলেছিলেন, টেস্ট পরীক্ষা কিভাবে নেয়া যায় সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভাবছে। যদি কোনো কারণে টেস্ট পরীক্ষা না হয়; সেক্ষেত্রে কি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সবাই ২০২১ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না, এমন সুযোগ নেই। অবশ্যই তাদের একটা এসেসমেন্ট হবে। এসেসমেন্টটা কিভাবে হবে তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শুধু টেস্টই নয়, আগামী বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সময়মতো হবে কিনা তা নিয়েও চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেই সঙ্গে পরীক্ষায় পাঠ্যক্রম কিছুটা কমানো হবে কি না, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, প্রায় আট মাস ধরে স্কুল বন্ধ। অনলাইনে কিছু কিছু ক্লাস হলেও মফস্বলে ইন্টারনেট সার্ভিস খুবই দুর্বল। একইসঙ্গে বহু শিক্ষার্থীর কাছে স্মার্টফোন না থাকায় অনেকেই সেই ক্লাসও করতে পারেনি। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম কমানো হবে কি, কমালে কতটা কমানো হবে তা এখনই জানতে চায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা বলেছেন, পড়াশুনায় কি হবে এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন গ্রাম, হাওড়-বাঁওড়, পাহাড় এবং চা শ্রমিক পরিবারের শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পায়নি। গ্রামের স্কুলে অনলাইন ক্লাসও ঠিকমতো হয়নি। অনেক পরীক্ষার্থী বাড়িতে বসে নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিলেও ঠিকঠাক তথ্য না জানায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ যাচ্ছে না।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একটি স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, শহরের স্কুলগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হলেও গ্রামে অন্যচিত্র। ইন্টারনেট কিনে কেউ ক্লাসে অংশ নিতে চায় না। এরফলে রাস্তাঘাটে দেখা হলে বা ফোনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন টেস্ট পরীক্ষা আদৌ হবে তো, হলে কি পুরো সিলেবাসেই পরীক্ষা নেয়া হবে? এ কারণে বিভিন্ন গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে।
রাজধানীর রায়েরবাজারের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু এর আগে টেস্ট পরীক্ষা হওয়ার কথা। অন্যান্য বছর এমন সময়ে টেস্ট পরীক্ষা হয়ে যায়। এবার এখনও হয়নি। এরফলে আমি বুঝতে পারছি না, টেস্ট পরীক্ষার কি হবে? বিশেষ করে, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, একটি এসেসমেন্টের মাধ্যমে টেস্ট পরীক্ষা হবে। কিন্তু কিভাবে সেই এসেসমেন্ট হবে, সেটা এখনও জানতে পারিনি। তা নিয়ে ঝামেলায় আছি। তার মতে, এসেসমেন্টের প্রক্রিয়া দ্রুত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে দেয়া উচিত।
রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আগামী বছর আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু এরআগে আমার টেস্ট পরীক্ষা কিভাবে হবে তা বুঝতে পারছি না। আর কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশুনাও ঠিকঠাকভাবে চলছে না।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় এ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি কয়েক দফা বাড়ানো হয়। গত ১৭ মার্চ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছুটির সময় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস চলছে এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও ক্লাস আপলোড করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ভিডিও ক্লাস চলছে।
দীর্ঘ ছুটির কারণে সাধারণ এলাকার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ও হাওরসহ দুর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের আওতায় আনারও চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি কমিউনিটি রেডিও’র মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমের অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে অনলাইন পাঠদান প্রক্রিয়া। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি কমিয়ে এবং ক্লাস বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ করার কথা ভাবছে সরকার।
মানবকণ্ঠ/এসকে